ক্যাপ্টেন বাভুমার হাত ধরেই দীর্ঘ ২৭বছর পর আইসিসি ট্রফি জিতলো সাউথ আফ্রিকা,ঘুচলো চোকার্স তকমাও।
দক্ষিণ আফ্রিকা যে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ক্রিকেটের ফাইনাল খেলবে এটা কেউ আগে থেকে ভাবতে পারেনি,আসলে খুব কম ম্যাচ খেলেই বাভুমার দল ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে ,সেই তুলনায় অনেক বেশি ম্যাচ খেলেছে ভারত ও ইংল্যান্ড। তবে এই ফাইনাল এর টিকিট পাওয়ার অন্যতম কারণ শেষ দুটো সিরিজে শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্থান কে হারায় তারা।

সর্বশেষ ১৯৯৮ সালের চ্যাম্পিয়ন ট্রফি জিতেছিল সাউথ আফ্রিকা তারপর ২৭ বছর পেরিয়ে গেলো কোনো আইসিসি ট্রফি জিততে। গত বছর টি – টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে উঠলেও ,জেতার মুখ থেকে তাদের হারতে হয় ভারতের কাছে। এভাবেই কখনো ফাইনাল,কখনো সেমিফাইনাল ম্যাচে হারতে হয় তাদের। মোট ১১বার আইসিসি ট্রফির সেমিফাইনাল থেকে খালি হাতে ফিরতে হয় তাদের,আর জুটতে থাকে চোকার্স তকমা।
সাউথ আফ্রিকা ক্রিকেটের এই খারাপ সময়েই যেনো আলোর কিরণ হয়ে আসলেন বাভুমা।২০১৪ সালে তার অভিষেক হয় জাতীয় দলে।তিনিই প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ ক্রিকেটার যিনি শতরান করেন।
২০২১ সালে কুইন্টন ডি কক কে সরিয়ে বাভুমা এক দিনের ক্রিকেটে অধিনায়ক করার পর বাভুমা কে কোটার ক্রিকেটার ও তার কম উচ্চতার জন্য নানারকম তির্যক মন্তব্য শুনতে হয়। স্যোশাল মিডিয়ায় তাকে নিয়ে মিমের বন্যা বইতে থাকে ,কিন্তু বাভুমা এইদিকে কোনো কর্ণপাত-ই করেননি।
২০২৩ সালে বাভুমাকে সাউথ আফ্রিকা টেস্ট দলের অধিনায়ক করা হয় ।তিনি মোট ১০টি টেস্ট ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেন এবং ৯টি ম্যাচ যেতেন। একটি ম্যাচও হরেন নি,তার টেস্ট ক্যারিয়ারে মাত্র ৪টি শতরান করেন তিনি । এমন অনেক ম্যাচে ৭০,৬০,৮০ রান করেন ,যা সাউথ আফ্রিকা দলকে জয়ী হতে সাহায্য করে।
ফাইনালে খেলতে নামার আগে বাভুমা জানান ,” যে লর্ডসে খেলার সুযোগ পেতাম না ,সেই লর্ডসে অধিনায়ক হয়ে খেলতে নামছি।এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে”।
প্রথম ইনিংসে সাউথ আফ্রিকার ১৩৮ রানে অলআউট হবার কেউ হয়তো ভাবতে পারিনি যে সাউথ আফ্রিকা জিতবে, কারণ দ্বিতীয় ইনিংসে আফ্রিকাকে জিততে ২৮২ রান করতে হতো। আর এখানেই মাত করলেন বাভুমা, মার্কারামরা।
মার্কারাম প্রথম ইনিংসে শূন্য রানে আউট হলেও দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি ১০০ রান করে দলকে নিশ্চিত জয়ের দিকে নিয়ে যান।এটা ছিল তার তৃতীয় শতরান। বাভুমা খোড়াচ্ছিলেন,ঠিক মতো দৌড়াতে পারছিলেন না।বাভুমা ধীরে খেলছিলেন আর সঙ্গ দিচ্ছিলেন মার্কারামের। বাভুমা আউট হবার পরেও মার্কারাম দলকে জেতানোর জন্য করে লড়ে গেছেন,তার এই লড়াই সাউথ আফ্রিকা ক্রিকটে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
তৃতীয় দিনের খেলার শেষে ডেভেলিয়ার্স বলেছিলেন “দক্ষিণ আফ্রিকা জিতলে তিনি কেঁদে ফেলবেন”। জয়ের পর তিনি হয়তো অবশ্যই কাঁদছেন। এতদিন শুধু যে চোখের জলই ফেলেছেন ,কখনো ফাইনালে হেরে,কখনো সেমিফাইনালে হেরে।এবারও কেঁদেছেন তবে সেটা বাঁধভাঙা আনন্দের,আবেগের।